রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
তন্ময় তপু: বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে তাদের বাধা এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দ্রুত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। তবে কারা কি কাজ করছে তার কিছুই জানে না বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ। সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ।
রোববার সাংবাদিকরা নির্মাণ কাজে অনিয়মের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ঠিকাদার জাহিদ হোসাইনের ভাই জাকির হোসেন সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেন। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সটকে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে কাজ বন্ধ করে দেয়ার কথা বললেও কাজ চালিয়ে যান ওই ঠিকাদার।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে আবারও কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা এসে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে এই নিম্নমানের কাজ বন্ধের নির্দেশনা দেয় এবং কাজ ঠিকভাবে না করলে বিল না দেয়ারও দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতারা।
জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী সরকারি বিএম কলেজে দীর্ঘ আন্দোলনের পর তিনটি ভবন এবং সড়কের কাজ শুরু হয়। তবে সেই কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা সময় অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কলেজের মসজিদ গেট থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে অনিয়মের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এর প্রমাণও মিলে।
যেখানে ১০ ইঞ্চি ব্যবধানে রড বাঁধার কথা সেখানে রড বাঁধা হয় ১৫ ইঞ্চির বেশি ব্যবধানে। পরে সেখানে সাংবাদিকদের দেখে পুনরায় সেই রড খুলে ফেলা হয় এবং তড়িঘড়ি করে এক রাতের মধ্যে ঢালাইকাজ সম্পন্ন করেন ঠিকাদার।
অভিযোগ রয়েছে- সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদার ও বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন এ কাজটি একা নয়, তার পিছনে রয়েছে কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য আহসান উল্লাহ মিরাজ ওরফে বাবু। আর এই বাবুর প্রভাবেই কলেজে এই নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ নেতারাও। আহসান উল্লাহ মিরাজ ওরফে বাবু নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজের চুক্তিতে তার প্রভাবে বিএনপি নেতা জাহিদ শুধু সড়ক নয়- কলেজের ভবন নির্মাণের কাজও পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সড়ক নির্মাণে কাজ করা আবদুল্লাহ নামে এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, ঠিকাদার যেভাবে কাজ করতে বলেছেন সেভাবে কাজ করছি। আমাদের তো কোনো বিষয় নেই এখানে। যেভাবে ঠিকাদার এস্টিমেট দিচ্ছেন সেভাবেই কাজ করছি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার জাহিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। পাশাপাশি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আহসান উল্লাহ মিরাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বিএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আতিকুল্লাহ মুনিম, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত ও মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, বিএম কলেজে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি চলতে দেয়া হবে না। আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর কলেজে নানা উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। আর এই উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না। যারা জড়িত রয়েছে তারা যতই ক্ষমতাশালী হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং এই কাজ নতুন করে করার দাবি করেন এই ছাত্রলীগ নেতারা।
সরকারি বিএম কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলামিন সরোয়ার নিশ্চিত করেছেন, বর্তমানে যে কাজগুলো বিএম কলেজে চলছে তার অধিকাংশ এই ঠিকাদারই করছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলছে, কাজে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের কাজ আমরা দেখব, কাজ যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোয়ালিটির সাথে কোনো আপোস করা হবে না।
এদিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম কিবরিয়া বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে এমন সমস্যা হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। যদি আমরা শিডিউলটাও পেতাম তাহলেও বুঝতে পারতাম কী ধরনের কাজ করতে বলা হয়েছে, আর ঠিকাদার কী করছেন।